Log in
English

জগদগুরু আরতি – চতুর্থ পর্ব

Jun 14th, 2025 | 3 Min Read
Blog Thumnail

Category: Spirituality

|

Language: Bangla

গুরু আরতির সর্বশেষ স্তবকটি হলঃ 
लली लाल लीला का सलोना सुविलास, छाया दिव्य दृष्टि बिच प्रेम का प्रकाश | 
वैसा ही विनोद वही मंजु मृदु हास. करें बस बरबस उच्च अट्टहास | 
झूमि चलें चाल वही नटवर की, गावो मिलि आरती रसिकवर की ||

ললী লাল লীলা কা সলোনা সুবিলাস, ছায়া দিব্য দৃষ্টি বিচ প্রেম কা প্রকাশ।
বৈসা হি বিনোদ বহি মঞ্জু মৃদু হাস, করেঁ বস বরবস উচ্চ অট্টহাস।
ঝুমি চলেঁ চাল বহী নটবর কী, গাবো মিলি আরতি রসিকবর কি।

অনুবাদঃ আমার গুরুদেবের দিব্য ব্যক্তিত্ব খুব সহজেই চোখে পড়ে – কারণ তিনি সবসময় রাধাকৃষ্ণের লীলাময় রূপ স্মরণ করিয়ে দেন। তাঁর উজ্জ্বল ও গভীর দৃষ্টিতে অগাধ প্রেমের ঝিলিক। তাঁর হাস্যরস অতুলনীয়; মৃদু হাসিই হোক বা অট্টহাস্য – তা সকলের হৃদয়কেই কোন না কোন ভাবে স্পর্শ করে। তাঁর হাঁটাচলার ভঙ্গি মাদকতাময় ও চিত্তাকর্ষক – ঠিক আমাদের প্রেমের ঠাকুর শ্রীকৃষ্ণের মত। এসো, আমরা সকলে তাঁর আরতি করি।
আরতির শেষ স্তবকে শ্রীকৃপালুজী মহারাজের দিব্য রূপকে রাধা ও কৃষ্ণের যুগলরূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের মত পতিত আত্মাদের কল্যাণের জন্য দিব্য লীলা প্রদর্শন করতে তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন – এমনই বিশ্বাস করা হয়। কোন কোন ব্যক্তি মহারাজজীকে স্বয়ং ব্রহ্ম (ঈশ্বর) বলে মনে করেন, যিনি সাধারণ জীবদের মুক্তি প্রদান করতে অবতার গ্রহণ করেছেন। তাঁর দিব্য রূপে রাধা ও কৃষ্ণের করুণা ও প্রেম প্রতিফলিত হয়। সেই করুণা ও প্রেম তাঁর প্রেমময় দৃষ্টিতে, দিব্য হাস্যরসে এবং তাঁর কোমল হাসিতে স্পষ্ট - যা ভক্তদের হৃদয়কে অনায়াসে মোহিত করে।

চৈতন্য মহাপ্রভু ও কৃপালুজী মহারাজের শিক্ষার সাদৃশ্য

শ্রীকৃপালুজী মহারাজ এবং চৈতন্য মহাপ্রভু – যাঁদের দুজনকেই রাধাকৃষ্ণের রূপ বলে গণ্য করা হয় – তাঁদের দার্শনিক তত্ত্বের সাদৃশ্যও লক্ষণীয়। চৈতন্য মহাপ্রভু যে দিব্য প্রেমের পথ দেখিয়ে গিয়েছিলেন, তারই বিস্তার লক্ষ্য করা যায় মহারাজজীর শিক্ষায় ও তাঁর দ্বারা নির্দেশিত রাধাকৃষ্ণ ভক্তিতে। তিনি শেখালেন যে দিব্য প্রেম লাভ করার জন্য নিষ্কাম, নিত্য এবং অনন্য ভক্তি অপরিহার্য। চৈতন্য মহাপ্রভুর পরম্পরায় মালা জপ, কণ্ঠী ধারণ, একাদশীর ব্রত পালন ইত্যাদি বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানকেও ঈশ্বর-সিদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করা হয়। তবে মহারাজজী ‘রূপ-ধ্যান’-এর মাধ্যমে মনকে শুদ্ধ করার উপরই বেশী প্রাধান্য দেন। 

মনের শুদ্ধিকরণের দ্বারা জাগতিক পীড়া থেকে মুক্তি

জীবনের নানা সময়ে আমরা সকলে বিভিন্ন জাগতিক দুর্ভোগ অনুভব করে থাকি। শ্রীকৃপালুজী মহারাজ বলেন যে আমাদের অন্তরের অশুদ্ধতা থেকেই সেই দুর্ভোগের উৎপত্তি। তাঁর বক্তব্য – বাহ্যিক জগৎ পরমেশ্বরের সৃষ্টি; কাজেই তাকে দোষারোপ করা উচিত নয়। পার্থিব দুঃখ–কষ্টের ঊর্ধ্বে যাওয়ার জন্য নিজের আভ্যন্তরীণ জগৎ, অর্থাৎ মনকে পবিত্র করতে হবে; আর তা একমাত্র সম্ভব হবে রাধাকৃষ্ণের নাম, রূপ, লীলা, গুণ ও ধামের নিরন্তর স্মরণের মাধ্যমে। সাধু-সন্ত-মহাপুরুষরাও এই একই পৃথিবীতে বাস করে দিব্য প্রেমের আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকতে পারেন – কারণ তাঁরা নিজেদের অন্তর শুদ্ধ করে নিতে সফল হয়েছেন। ঈশ্বর যখন আমাদের মনে স্থিত হন, তখন এই একই বহির্জগৎ আনন্দময় হয়ে ওঠে। চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা অনুসরণ করেই শ্রীকৃপালুজী মহারাজ এই দার্শনিক তত্ত্বের প্রচার করেন।   

শ্রীকৃপালুজী মহারাজের রসিক স্বভাব

মহারাজজীর ব্যবহারে ছিল পাণ্ডিত্য ও শিশুসুলভ সারল্যের অপূর্ব মিশ্রণ। তিনি ভক্তদের সঙ্গে বিভিন্ন মেজাজে বহু লীলা করতেন – ঠিক যেন শ্যামসুন্দরের মত। কৌতুকের সঙ্গে দুষ্টুমির দ্বারা সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারার তাঁর এই ‘বিনোদী স্বভাব’ বারবার কৃষ্ণের কথাই মনে করায়। তাঁর মনোরম হাসি তথা প্রাণবন্ত অট্টহাস্যে দিব্যত্ব অনুভব করা যেত। তাঁর হাঁটা–চলার ভঙ্গির কমনীয়তা শ্যামসুন্দরের গতিবিধির মতোই মনে হতো, যা দেখে সকলেই মোহিত হত। মহারাজজী নিজে দিব্য প্রেমের আস্বাদন করতেন এবং ভক্তদের সেই আনন্দ বিতরণ করতেন - নিরাকার ব্রহ্মানন্দ ও সাকার প্রেমানন্দ - উভয় রূপেই। ভক্ত হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের গুরুর কৃপার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করা, তাঁর শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে মনে গেঁথে নেওয়া এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। মহারাজজীর শিক্ষার সারমর্ম হল - নিষ্কাম, নিরন্তর এবং অনন্য ভক্তির পথ অনুসরণ করে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের চরণে সমর্পণ করতে হবে।

সারসংক্ষেপে, জগদগুরুর আরতির অন্তিম স্তবক শ্রীকৃপালুজী মহারাজের দিব্য স্বভাব এবং তাঁর দ্বারা প্রচারিত ভগবৎ প্রেমের শিক্ষার প্রতিফলন ঘটায়। তিনি চিরকাল অন্তরের জগৎ, অর্থাৎ মনকে শুদ্ধ করাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন – যার মাধ্যমে পার্থিব দুঃখ-কষ্টের ঊর্ধ্বে ওঠা যায় এবং নানা সমস্যা-জর্জরিত এই পৃথিবীতে থেকেও আনন্দে জীবন কাটানো যায়। মহারাজজীর স্বরূপ ও তাঁর দর্শনের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করা ভক্তদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।