Log in
English

জগদগুরু আরতি – তৃতীয় পর্ব

Jun 13th, 2025 | 3 Min Read
Blog Thumnail

Category: Spirituality

|

Language: Bangla

গুরুদেবের প্রতি বিনম্র প্রণাম জানিয়ে এই পর্বে আমরা জগদগুরু আরতির তৃতীয় স্তবকের অর্থ আলোচনা করব। 
भक्तियोग-रस-अवतार अभिराम, करें निगमागम समन्वय ललाम।
श्यामा-शयाम नाम, रूप, लीला, गुण, धाम, बांटि रहे प्रेम निष्काम बिनु दाम।
हो रही सफल काया नारी नर की, गावो मिलि आरती रसिकवर की॥

ভক্তিযোগ-রস-অবতার অভিরাম, করেঁ নিগমাগম সমন্বয় ললাম।
শ্যামা-শ্যাম নাম, রূপ, লীলা, গুণ, ধাম, বাঁটি রহে প্রেম নিষ্কাম বিনু দাম।
হো রহি সফল কায়া নারী-নর কী, গাও মিলি আরতি রসিকবর কী।

অনুবাদঃ প্রেম ও আনন্দের অবতার আমার গুরুদেব বেদ-শাস্ত্রের বহু বিরোধী তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তিনিই অনুগ্রহ করে আমাদের রাধাকৃষ্ণের নাম, রূপ, গুণ, ধাম ও লীলার গুণগান করতে শিখিয়েছেন। নিঃস্বার্থভাবে ভক্তদের অমূল্য দিব্য প্রেম বিতরণ করতে তৎপর তিনি। তাঁর সঙ্গলাভ করে বহু মানুষ কৃপা লাভ করেছেন। 

“ভক্তিযোগ-রসাবতার” উপাধি

মহারাজজীকে ভক্তিযোগ-রসাবতার আখ্যায় ভূষিত করে কাশী বিদ্বৎ পরিষদ। কাশী বিদ্বৎ পরিষদ আধ্যাত্মিক শিক্ষার কেন্দ্রস্থল হিসেবে স্বীকৃত যেখানে প্রায় ৫০০ জন শাস্ত্রজ্ঞানসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতের সমাবেশ ছিল। এই উপাধি মহারাজজীর ভক্তিরসের মূর্ত স্বরূপকে প্রতিফলিত করে। ঈশ্বরকে প্রসন্ন করার অমোঘ ক্ষমতা তাঁর ছিল - যা শাস্ত্র অনুসারে "হ্লাদিনী শক্তি" বা রাধারাণীর শক্তিরূপে পরিচিত। এর থেকে এটুকু বোঝা যায় যে শ্রীকৃপালুজী মহারাজ কৃপাময়ী রাধারাণীর অবতার ছিলেন।

শাস্ত্রের বিপরীতধর্মী তত্ত্বের সমন্বয়

আমাদের শাস্ত্র-উপনিষদে এমন অনেক তত্ত্ব আছে যেগুলি আপাতদৃষ্টিতে পরস্পর-বিরোধী বলে বোধ হয়। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শ্রীমহারাজজী সেইসব তত্ত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে ব্যাখ্যা দেন (করেঁ নিগমাগম সমন্বয় ললাম)। তাঁর ভক্তিদর্শনের মূল ভিত্তি ছিল বেদ; ভক্তি-সম্পর্কিত তাঁর প্রতিটি যুক্তি তিনি বহু বৈদিক মন্ত্রের দ্বারা সত্য প্রমাণ করতেন। তিনি বেদ-কেই দিব্য জ্ঞানের সর্বোচ্চ উৎস হিসেবে স্বীকার করতেন। মহারাজজী বেদকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে তিনি বলতেন – স্বয়ং ঈশ্বরও বেদকে অস্বীকার করতে পারেন না। যেসব পণ্ডিতেরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য পশুবলি ও অন্যান্য তথাকথিত রীতি-নীতি পালনের জন্য বেদের ভুল ব্যাখ্যা করতেন, মহারাজজী তাঁদের কঠোরভাবে বিরোধিতা করেন। মহারাজজী “রামায়ণ”, “মহাভারত” এবং পুরাণের মতো ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলিকে পঞ্চম বেদ হিসাবে গণ্য করেছিলেন; এবং বেদব্যাস রচিত “শ্রীমদ্ভাগবত” গ্রন্থের সঙ্গে সেগুলির সামঞ্জস্য রেখে ব্যাখ্যা করেন।

দার্শনিক তর্কের সমাধান

শ্রীকৃপালুজী মহারাজ কেবলমাত্র সাকার ও নিরাকার ঈশ্বরের বিপরীত ধারণাগুলিকে সংহত করেননি, বরং দ্বৈতবাদ (জগদগুরু মাধবাচার্য দ্বারা প্রচারিত) এবং অদ্বৈতবাদ (জগদগুরু শঙ্করাচার্য দ্বারা প্রস্তাবিত) সম্পর্কিত দীর্ঘদিনের বিতর্কেরও সমাধান করেছেন। তিনি প্রমাণ করেন যে ঈশ্বর সাকার এবং নিরাকার – উভয় স্বরূপেই বিদ্যমান এবং তিনি চৈতন্য মহাপ্রভুর অচিন্ত্য ভেদাভেদ মতবাদকে সমর্থন করেন। তাঁর “ভক্তি শতক” গ্রন্থানুসারে জীব এবং মায়া হল ঈশ্বরের দুটি শক্তি, আর ঈশ্বর হলেন সকল শক্তির অধিপতি। এই যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায় যে জীব ঈশ্বরের সাথে একইসঙ্গে এক অথচ পৃথক। আত্মা ঈশ্বরের জীবশক্তির অংশ, যার কারণে আত্মায় দিব্যত্ব বিরাজ করে; কিন্তু আত্মা সরাসরি ঈশ্বরের অংশ নয়। 

শ্রীকৃপালুজী মহারাজের নিঃস্বার্থ অবদান

জগদগুরু আরতির তৃতীয় স্তবকের এই পংক্তিগুলি বর্ণনা করে যে কিভাবে মহারাজজী নিঃস্বার্থভাবে উদারতার সঙ্গে শ্রীরাধা-কৃষ্ণের নাম, গুণ, রূপ, ধাম, লীলা এবং নিষ্কাম প্রেম প্রচার করেছেন। তাঁর রচিত ভক্তিমূলক সাহিত্যসম্ভারের লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে মানুষকে ভক্তির মাধ্যমে সফল মানবজীবন গঠনে অনুপ্রাণিত করা। জগদগুরু শ্রীকৃপালুজী মহারাজের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম - যার মধ্যে রয়েছে “প্রেম রস সিদ্ধান্ত”, “প্রেম রস মদিরা”, “ভক্তি শতক”, “রাধা গোবিন্দ গীত”, “ব্রজ রস মাধুরী” এবং “শ্যামা শ্যাম গীত” – এই সবকিছুই সেই বৃহত্তর উদ্দেশ্যের প্রতি সমর্পিত। এই গ্রন্থগুলির ছত্রে ছত্রে আছে উচ্চমার্গের দার্শনিক জ্ঞান, যা সহজ-সরল ভাষায় সনাতন বৈদিক ধর্মের সারাংশ তুলে ধরে এবং সেই রচনাগুলি অসংখ্য মানুষকে আজও নিষ্কাম ভক্তির পথে যাত্রার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে।

সংক্ষেপে বলা যায়, মহারাজজীর আরতির তৃতীয় শ্লোক তাঁর অনন্য আধ্যাত্মিক মহিমা, শাস্ত্রীয় বিরোধ সমাধানে তাঁর ভূমিকা, দার্শনিক বিতর্কের নিষ্পত্তি এবং ভক্তিমূলক সাহিত্যের জগতে তাঁর অতুলনীয় অবদানকে তুলে ধরে। মহারাজজীর শিক্ষা এবং সাহিত্য আজও সাধকদের তাঁদের আধ্যাত্মিক যাত্রায় পথপ্রদর্শন ও অনুপ্রাণিত করে চলেছে।