এই সংস্করণে আমরা জগদগুরুর আরতি সঙ্গীত (জয়তি জগদগুরু গুরুবর কী)-এর দ্বিতীয় স্তবকের ব্যাখ্যা অনুধাবন করব। শ্রীকৃপালুজী মহারাজ চিরকালই “রূপ-ধ্যান”-কে প্রাধান্য দিয়েছেন – অর্থাৎ ঈশ্বর ও গুরুর নাম, রূপ, গুণ, ধাম ও লীলার স্মরণ। এই দ্বিতীয় স্তবকটি আমাদের বিশেষ করে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমাদের মনকে জাগতিক বিষয় থেকে সরিয়ে গুরুর প্রতি মনঃসংযোগ করতে হবে।
अरे मन मूढ़! छाँडु नारी नर हाथ, गुरु बिनु ब्रह्मा श्यामहूँ न देंगे साथ।
कोमल कृपालु बड़े कृपासिंधु नाथ, पाके इन्हे आज तू अनाथ हो सनाथ।
इन्हीं के आधीन कृपा गिरिधर की, गावो मिलि आरती रसिकवर की॥
অরে মন মূঢ়! ছাঁড়ু নারী নর হাথ, গুরু বিনু ব্রহ্মা শ্যামহুঁ না দেঙ্গে সাথ।
কোমল কৃপালু বড়ে কৃপাসিন্ধু নাথ, পাকে ইন্হে আজ তু অনাথ হো সনাথ।
ইন্হীঁ কে আধীন কৃপা গিরিধর কী, গাভো মিলি আরতি রসিকবর কী।।
অনুবাদঃ আরে মূর্খ মন! জাগতিক সম্পর্কের উপর ভরসা রাখিস না। বরং গুরুর পাদপদ্মে আশ্রয় খুঁজে নে। তাঁর কৃপা না হলে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণও কোন সাহায্য করতে পারবেন না। আমার গুরু কৃপার সমুদ্র এবং অসীম ক্ষমাশীল। গভীর প্রেমের সঙ্গে যে সুরক্ষা তিনি প্রদান করেন – তার পর আর আমার অসুরক্ষিত অথবা অনাথ (যেহেতু ঈশ্বরের উপলব্ধি থেকে দূরে এবং পার্থিব পিতা-মাতা মরণশীল) বোধ করার কোন সম্ভাবনাই নেই। এটা মনে রাখতে হবে যে শ্রীকৃষ্ণও তাদেরই দয়া করেন যাদের প্রতি গুরু সন্তুষ্ট থাকেন।
অজ্ঞানী বহির্মুখী মনকে পার্থিব মোহ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে উপরোক্ত পংক্তিগুলিতে। ভক্তদের গুরুর চরণে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। একথা সম্পূর্ণ জোর দিয়ে বলা যায় যে গুরুর শরণে না থাকলে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণও আমাদের সাহায্য করতে পারেন না। ভগবান নিজেই অপেক্ষা করে থাকেন যাতে কোন ভক্ত গুরুর প্রতি সমর্পিত হলেই তিনি কৃপা করতে পারেন - এতটাই গুরুত্বপূর্ণ গুরুর ভূমিকা।
কোমল স্বভাবযুক্ত দয়ানিধি শ্রীকৃপালুজী মহারাজ
শ্রীকৃপালুজী মহারাজ, যাঁকে অনেক সময় ‘কোমল কৃপালু’ বলা হয়ে থাকে - তাঁর হৃদয় অত্যন্ত কোমল; সেখানে দয়ার নিবাসস্থল। তিনি শুধু চরাচরের সমস্ত পতিত মানুষদেরই কৃপা বর্ষণ করে ক্ষান্ত হননি; এমনকি সেই অভাগা দুরাত্মা, যাদের মানবশরীরও জোটেনি – তাদেরও উদ্ধারের পথ দেখিয়েছেন।
একটা ঘটনার কথা বললে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে। একজন অসৎ মহিলার অতৃপ্ত আত্মা একবার মহারাজজীর সৎসঙ্গে নানা উৎপাত করছিল। শ্রীমহারাজজী সেই আত্মার উপস্থিতি উপলব্ধি করে তার সব ক্ষতিকারী শক্তি নষ্ট করে দেন। আশ্চর্য হয়ে সেই দুরাত্মা তার মালিকের কাছে গিয়ে নিজের সব ক্ষমতা হারানোর কারণ জিজ্ঞাসা করে। মালিক জানান যে – “তুমি স্বয়ং নারায়ণের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করেছ। তার সামনে তো আমার ক্ষমতাও শূন্য।“
মহারাজজী যে শুধু ওই দুরাত্মার ক্ষমতা নষ্ট করেছিলেন তাই নয়, জঙ্গলে গিয়ে ভগবানের ভক্তি করার উপদেশও দেন। পরে সেই আত্মা নাকি জঙ্গলে গিয়ে আরও কিছু আত্মার সঙ্গে প্রতিদিন ভজন-কীর্তন শুরু করে দেয়। এভাবেই, একজন দিশাবিহীন নিরাশ্রয় দুষ্ট আত্মাকেও সঠিক পথ দেখিয়ে “সনাথ” (যার ‘নাথ’ অর্থাৎ পথপ্রদর্শক আছে) বানিয়ে দেন আমাদের কৃপালু জগদগুরু।
শরণাগতির শক্তি
উপরোক্ত ঘটনা থেকে শরণাগতির গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। একটি “জীব” – সে যতই পতিত হোক না কেন; সকলের কাছে যতই অবাঞ্ছিত হোক না কেন – তারও মুক্তিলাভ সম্ভব যদি তার উদ্দেশ্য পবিত্র হয়। পতিত থেকে পবিত্রতার পথে রূপান্তরের চাবিকাঠিই হলেন গুরু। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা অনাথ হলেও এমন এক মহান গুরুর শরণাগত হয়ে গেলে আমাদের দুর্দশার অন্ত হওয়া সম্ভব।
ভক্তিমার্গে গুরুর ভূমিকা
ভক্তি পথে চলার ক্ষেত্রে গুরুর ভূমিকা অপরিসীম। গুরুর কৃপা লাভ করতে চাইলে প্রথমে তো গুরুর মহত্ব অনুভব করতে হবে এবং তারপর তাঁকে সরল নিষ্কপটভাবে ভালবাসতে হবে। গুরুর দিব্য লীলা চর্চা করলে তাঁর প্রতি আমাদের ভালবাসা দৃঢ় হয় ও আমাদের আত্মা শুদ্ধ হয়। এইভাবেই আমরা অভ্যাসের মাধ্যমে নিজেদের ঘষেমেজে তৈরী করতে পারি যাতে গুরু আমাদের ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায়, আমাদের মত নিকৃষ্ট আত্মাদেরও সুযোগ আছে যে একদিন সব জাগতিক ভোগান্তি শেষ হবে এবং আমরা গুরুর চরণে দিব্য আশ্রয় লাভ করব। ঈশ্বরের নিকট পৌঁছানোর সেতু হলেন গুরু। গুরুর নির্দেশিত পথে ভক্তি করাই ঐশ্বরিক দিব্যানুভূতি লাভের একমাত্র পথ। এই স্তবকে গুরুর মহত্ব ও শরণাগতির শক্তির পরিচয় দেওয়া হয়েছে।