Log in
English

গোপাষ্টমী: বৃন্দাবনের মাটিতে গরু ও গোপালের প্রেমলীলা

Jul 2nd, 2025 | 2 Min Read
Blog Thumnail

Category: Vedic Tales

|

Language: Bangla

গোপাষ্টমী একটি পবিত্র হিন্দু উৎসব, যা কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে উদযাপিত হয়। এই দিনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, কারণ এটি সেই দিনকে স্মরণ করায় যেদিন শ্রীকৃষ্ণ তাঁর শৈশবে প্রথমবারের মতো গরু ও বাছুর নিয়ে চরাতে গিয়েছিলেন। এই ঘটনা শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনের দিব্য লীলার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

গোবর্ধন লীলা এবং “গিরিধারী”, “গোপাল” ও “গোবিন্দ” নামগুলির উদ্ভব

গোপাষ্টমীর সঙ্গে জড়িত অন্যতম বিখ্যাত ঘটনা হলো গোবর্ধন লীলা। একবার স্বর্গের রাজা ইন্দ্র ব্রজবাসীদের উপর রুষ্ট হয়ে প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে। তখন কিশোর শ্রীকৃষ্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর কনিষ্ঠা(কড়ে) আঙুলে গোবর্ধন পর্বত ধারণ করেন এবং সেই পর্বতের নিচে সকল ব্রজবাসীকে আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করেন। এই অলৌকিক কর্মের ফলে তিনি “গোবর্ধনধারী” বা “গিরিধারী” নামে পরিচিত হন।

এই দিব্য লীলা সাত দিন ধরে চলতে থাকে, এবং অষ্টম দিনে ইন্দ্র তাঁর ভুল উপলব্ধি করে শ্রীকৃষ্ণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে আসেন। সেই সময় একটি পবিত্র গাভী, যার নাম ছিল সুরভী, ইন্দ্রের ওপর দুধ ছিটিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে “গোবিন্দ” নামে অভিষিক্ত করেন—যার অর্থ গোমাতা-দের রক্ষাকর্তা এবং গোমাতা-দের অধীশ্বর। সেই থেকে শ্রীকৃষ্ণ “গোপাল” নামেও পরিচিত হন— যিনি গরুদের পালন ও রক্ষা করেন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও গোমাতার মধ্যে দিব্য সম্পর্ক

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও গোমাতার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং তাঁর ঈশ্বরীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বৃন্দাবনের শোভাময় চরাগাহে শ্রীকৃষ্ণের গোপাল লীলা বা গোচারণ লীলা—যেখানে তিনি গরু চরাতেন—রসিক সাধুদের কবিতা ও রচনার এক প্রিয়তম বিষয়। জগদগুরু শ্রী কৃপালুজী মহারাজ তাঁর গ্রন্থ “প্রেম রস মদিরা”-র এক পদে এই দিব্য দৃশ্যটি অপূর্বভাবে চিত্রিত করেছেন।
धूसरि धूरि भरे हरि आवत।
ধূসরি ধূরি ভরে হরি আবত।

मोर मुकुट कटि कछनी काछे, मुरली मधुर बजावत।
মোর মুকুট কটি কছনী কাছে, মুরলী মধুর বজাবত।

धुनि सुनि वेनु सबै ब्रजबनिता, देखन को जुरि धावत।
ধুনি শুনি বেণু সবৈ ব্রজবনিতা, দেখন কো জুরি ধাবত।

काँधे लकुटि कामरी कारी, लट उरझी मन भावत।
কাঁধে লকুটি কামরী কারী, লট ওরঝী মন ভাবত।

वत्स-प्रेम रस पूरि सुरभि थन, मेदिनि क्षीर चुवावत।
বৎস-প্রেম রস পূরি সুরভি থন, মেদিনি ক্ষীর চুবাবত।

सो 'कृपालु' झाँकी झाँकन हित, शंभु समाधि भुलावत॥
সো ‘কৃপালু’ ঝাঁকী ঝাঁকন হিত, শম্ভু সমাধি ভুলাবত ।।
“যখন হরি গোচারণ করে ফিরে আসেন, তাঁর সমগ্র দেহ গরুর খুরে উড়ে আসা ধুলায় আবৃত। মাথায় ময়ূরপঙ্খী শোভিত মুকুট, কোমরে লাল কোমরবন্ধনী, আর হাতে বাঁশি—যা থেকে বের হয় মধুর সুর। তাঁর সেই মোহময় বাঁশির সুর শুনে গোপীগণ বিমোহিত হয়ে ছুটে আসেন তাঁর এক ঝলকের জন্য।
তাঁর হাতে একটি দণ্ড, আর কাঁধে একটি কালো চাদর। আর ঘন কোঁকড়ানো কেশরাশি এমন মোহনীয় যে, তা যেন মুহূর্তেই হৃদয়কে মুগ্ধ করে তোলে। শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গভীর ভালোবাসায় গরুরা আপনাতেই দুধ ছাড়ে।
এই দৃশ্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যে, যোগ-নিদ্রায় তন্ময় মহাদেবও সেই নিরাকার ব্রহ্ম-সমাধি ত্যাগ করে এই লীলা দর্শন করতে চলে আসেন।”

গোপাষ্টমী হলো এক আনন্দময় উৎসব, যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গোমাতার প্রতি প্রেম ও বৃন্দাবনের অধিবাসীদের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ককে স্মরণ করায়। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ঈশ্বর ও তাঁর ভক্তদের (মানব ও প্রাণী উভয়ের) মধ্যে কত গভীর ভক্তি ও স্নেহের বন্ধন বিরাজ করে।