"শ্রীকৃষ্ণাষ্টকম্" একটি ভক্তিমূলক স্তোত্র, যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে উৎসর্গ করে রচনা করেছিলেন আদি শঙ্করাচার্য। এই স্তোত্রে আদি শঙ্করাচার্য শ্রীকৃষ্ণের দিব্য গুণাবলী এবং মনমোহক রূপের অপূর্ব বর্ণনা করেছেন, যেখানে তিনি শ্রীকৃষ্ণকে আখ্যা দিয়েছেন ‘জগদগুরু’ রূপে - অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বজগতের পরম আধ্যাত্মিক গুরু। এই স্তোত্রে শ্রীকৃষ্ণের অসীম করুণা, ভক্তদের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক এবং তাঁকে স্মরণ করার অপার প্রভাবের কথা বর্ণিত আছে। গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রার্থনারূপে "কৃষ্ণাষ্টকম্" পাঠ করলে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও পাপমোচনের পথ উন্মোচিত হয়।
वसुदेवसुतं देवं कंसचाणूरमर्दनम् ।
देवकीपरमानन्दं कृष्णं वन्दे जगद्गुरुम् ॥ १ ॥
বসুদেবসুতং দেবং কংসচাণূরমর্দনম্ ।
দেবকীপরমানন্দং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্গুরুম্ ॥ ১ ॥
আমি প্রণাম করি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে - যিনি বসুদেবের পুত্র, স্বয়ং পরমেশ্বর, কংস ও চাণূরের বিনাশকারী, এবং যিনি তাঁর জননী দেবকীর হৃদয়ে পরম আনন্দের সঞ্চার করেন। তিনি জগদগুরু - সমগ্র বিশ্বের আধ্যাত্মিক শিক্ষক।
अतसीपुष्पसङ्काशं हारनूपुरशोभितम् ।
रत्नकङ्कणकेयूरं कृष्णं वन्दे जगद्गुरुम् ॥ २ ॥
অতসীপুষ্পসঙ্কাশং হারনূপুরশোভিতম্ ।
রত্নকঙ্কণকেয়ূরং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্গুরুম্ ॥ ২ ॥
আমি প্রণাম করি জগদগুরু শ্রীকৃষ্ণকে, যাঁর রূপ অতসী ফুলের নীলিমার মতো দীপ্তিময়, যিনি কণ্ঠে হার ও চরণে নূপুর ধারণ করেন, এবং যাঁর হস্তে রত্নখচিত কঙ্কণ ও বাজুবন্ধ শোভা পায়। আমি সেই জগদগুরু কৃষ্ণকে প্রণাম জানাই।
कुटिलालकसम्युक्तं पूर्णचन्द्रनिभाननम् ।
विलसत्कुण्डलधरं कृष्णं वन्दे जगद्गुरुम् ॥ ३ ॥
কুটিলালকসংযুক্তং পূর্ণচন্দ্রনিভাননম্ ।
বিলসত্কুণ্ডলধরং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্গুরুম্ ॥ ৩ ॥
আমি প্রণাম করি সেই শ্রীকৃষ্ণকে, যাঁর কোঁকড়ানো সুন্দর কেশরাশি মুখমণ্ডলের দীপ্তি আরও বাড়িয়ে তোলে। তাঁর মুখ পূর্ণিমার চাঁদের মতো মনোরম, কানে ঝুলন্ত ঝকমকে কুণ্ডল শোভা পায়। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সেই জগদগুরু কৃষ্ণকে প্রণাম জানাই।
मन्दारगन्धसम्युक्तं चारुहासं चतुर्भुजम् ।
बर्हिपिञ्छावचूडाङ्गं कृष्णं वन्दे जगद्गुरुम् ॥ ४ ॥
মন্দারগন্ধসংযুক্তং চারুহাসং চতুর্ভূজম্ ।
বর্হিপিঞ্ছাভচূডাঙ্গং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্গুরুম্ ॥ ৪ ॥
আমি প্রণাম করি সেই শ্রীকৃষ্ণকে, যাঁর দিব্য দেহ মন্দার ফুলের সৌরভে সুবাসিত, যাঁর মধুর হাসি হৃদয়কে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। চতুর্ভূজ রূপে তিনি পরম দীপ্তিময় ও অলৌকিক সৌন্দর্যের আধার। তাঁর মুকুটে শোভা পায় ময়ূরপুচ্ছ, যা তাঁর সৌন্দর্যকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সেই জগদগুরু কৃষ্ণকে প্রণাম জানাই।
उत्फुल्लपद्मपत्राक्षं नीलजीमूतसन्निभम् ।
यादवानां शिरोरत्नं कृष्णं वन्दे जगद्गुरुम् ॥ ५ ॥
উৎফুল্লপদ্মপত্রাক্ষং নীলজীমূতসন্নিভম্ ।
যাদবানাং শিরোরত্নং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্গুরুম্ ॥ ৫ ॥
আমি প্রণাম করি সেই শ্রীকৃষ্ণকে, যাঁর নয়ন প্রস্ফুটিত পদ্মের পাঁপড়ির মতো কোমল ও মাধুর্যময়, যাঁর রূপ গাঢ় নীল মেঘের মতো মনোহর ও লাবণ্যময়। তিনি যাদব বংশের রত্ন, সকল সদ্গুণে পরিপূর্ণ, প্রেম ও করুণার বিশাল সাগর। তিনি ভক্তদের হৃদয়ে বিরাজমান। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সেই জগদগুরু কৃষ্ণকে প্রণাম জানাই।
रुक्मिणीकेलिसम्युक्तं पीताम्बरसुशोभितम् ।
अवाप्ततुलसीगन्धं कृष्णं वन्दे जगद्गुरुम् ॥ ६ ॥
রুক্মিণীকেলিসংযুক্তং পীতাম্বরসুশোভিতম্ ।
অবাপ্ততুলসীগন্ধং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্গুরুম্ ॥ ৬ ॥
আমি প্রণাম করি সেই শ্রীকৃষ্ণকে, যিনি রুক্মিণীর সঙ্গে প্রেমলীলারত, যাঁর পরনে হলুদ বসন এবং যাঁর দিব্য শরীরে তুলসীর পবিত্র নির্যাস ব্যপ্ত। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সেই জগদগুরু কৃষ্ণকে প্রণাম জানাই।
गोपिकानां कुचद्वन्द्वकुङ्कुमाङ्कितवक्षसम् ।
श्रीनिकेतं महेष्वासं कृष्णं वन्दे जगद्गुरुम् ॥ ७ ॥
গোপিকানাং কুচদ্বন্দ্বকুঙ্কুমাঙ্কিতবক্ষসম্ ।
শ্রীনিকেতং মহেষ্বাসং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্গুরুম্ ॥ ৭ ॥
আমি প্রণাম করি সেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে, যাঁর বক্ষে গোপীদের প্রেমরস-রঞ্জিত কুমকুমচিহ্ন শোভা পায়, যাঁর হৃদয়ে লক্ষ্মীর (শ্রী) চিরন্তন নিবাস এবং যিনি শক্তিশালী ধনুর্ধর। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সেই জগদগুরু কৃষ্ণকে প্রণাম জানাই।
श्रीवत्साङ्कं महोरस्कं वनमालाविराजितम् ।
शङ्खचक्रधरं देवं कृष्णं वन्दे जगद्गुरुम् ॥ ८ ॥
শ্রীবৎসাঙ্কং মহোরস্কং বনমালাবিরাজিতম্ ।
শঙ্খচক্রধরং দেবং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্গুরুম্ ॥ ৮ ॥
আমি প্রণাম করি সেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে, যাঁর সুবিশাল প্রশস্ত বক্ষে অঙ্কিত শ্রীবৎস চিহ্ন, যাঁর গলায় বনমালা বিরাজ করে এবং যিনি শঙ্খ ও চক্র ধারণ করেন। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সেই জগদগুরু কৃষ্ণকে প্রণাম জানাই।
कृष्णाष्टकमिदं पुण्यं प्रातरुत्थाय यः पठेत् ।
कोटिजन्मकृतं पापं स्मरणेन विनश्यति ॥ ९ ॥
इति श्री कृष्णाष्टकम् ॥
কৃষ্ণাষ্টকমিদং পুন্যং প্রাতরুত্ত্থায় যঃ পঠেত্ ।
কোটিজন্মকৃতং পাপং স্মরণেন বিনশ্যতি ॥ ৯ ॥
ইতি শ্রী কৃষ্ণাষ্টকম্॥
এই কৃষ্ণাষ্টকম্ যদি কোনো ভক্ত প্রাতঃকালে উত্থান করে পাঠ করেন, তবে অসংখ্য জন্মের পাপ বিনষ্ট হয়। কেবলমাত্র শ্রীকৃষ্ণের স্মরণ মাত্রেই সমস্ত সঞ্চিত পাপ ধুয়ে যায়।
এতদ্বারা শ্রী কৃষ্ণাষ্টকম্ সমাপ্ত।